ডপলার ক্রিয়া











আমরা বিজ্ঞান পড়ি ঠিকই কিন্তু বিজ্ঞানের বিষয়গুলো ভালভাবে বুঝতে পারি না। ডপলার ক্রিয়া বা ডপলার ইফেক্ট বিষয়টি পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ অনেক শিক্ষকেরা পর্যন্ত বিষয়টি ঠিকভাবে বুঝেন না। তাই স্টুডেন্টদেরকেও শুধু পড়িয়ে ছলিমবুঝ দিয়ে থাকেন।

উৎস এবং পর্যবেক্ষকের মধ্যকার আপেক্ষিক গতির কারণে কোন তরঙ্গ-সংকেতের কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ডপলার ক্রিয়া Doppler Effect) বলা হয়।

ক্রিস্টিয়ান আনড্রেয়াস ডপলার এর নামে এই ক্রিয়াটির নামকরণ করা হয়েছে।


ডপলার নীতির সব চাইতে সুন্দর উদাহরণ হচ্ছে প্লাটফর্ম-এর ট্রেন। ট্রেন যখন তার ঝিকঝিক হুইসেল বাজিয়ে স্টেশনে আসে তখন আমাদের কাছে এর হুইসেলের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এটার স্বাভাবিক কারণ হচ্ছে ট্রেন থেমে থাকলে যে সমস্ত তরঙ্গ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতো চলন্ত অবস্থায় এই তরঙ্গের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎস এক সেকেন্ডে যে কম্পাঙ্ক উৎপন্ন করে শ্রোতা তার বেশী কম্পাঙ্ক শুনতে পায় এক সেকেন্ডে। আবার ট্রেন যখন স্টেশন থেকে দূরে চলে যায় তখন হুইসেলের তীব্রতা কমে যায়। কারণ, তখন শ্রোতার নিকট উৎস দূরে চলে যাওয়াতে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে আগের চাইতে কম তরঙ্গের সন্নিবেশ ঘটে। ফলে উৎস এক সেকেন্ডে যে কম্পাঙ্ক উৎপন্ন করে শ্রোতা তার কম কম্পাঙ্ক শুনতে পায় এক সেকেন্ডে। ফলে শব্দের প্রভাব আপাত হ্রাস পায়।

তবে ডপলারের প্রভাব শুধু শব্দ তরঙ্গে হয় তা নয়, এটা আলোক তরঙ্গেও দেখা যায়। বিশেষ করে জ্যোতি-পদার্থবিদ্যায় (Astro-Physics) গবেষণায় এর প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ।


দূরবর্তী নক্ষত্র হতে নিঃসৃত আলো পর্যবেক্ষণ করার সময় ডপলার নীতি ব্যবহার করা হয় প্রথমে আক বাতিতে একই বর্ণালি পর্যবেক্ষণ করা হয় তখন দেখা যায় নক্ষত্র হতে নিঃসৃত আলো ধীরে ধীরে বেগুনি  কিংবা লাল প্রান্তের দিকে যাচ্ছে। যদি বেগুনি প্রান্তের দিকে সরে আসে তাহলে বুঝতে হবে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হ্রাস পাচ্ছে আর কম্পাঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে আর যদি লাল দিকে সরে আসে তাহলে বুঝতে হবে তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বাড়ছে আর কম্পাঙ্ক হ্রাস পাচ্ছে। অর্থাৎ, নক্ষত্র পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় এই গ্যালাক্সিগুলো শুধু পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না বরং পরস্পর থেকেও দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ আমাদের এই মহাবিশ্ব ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে।

চিকিৎসাশাস্ত্রেও ডপলার প্রভাব লক্ষণীয়। ডপলার নীতির উপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করা হয়। এছাড়া নাড়িতে রক্ত প্রবাহ দেখা যাবে ডপলার প্রভাবের  মাধ্যমে। গর্ভবতী নারীর পেটের চর্বি, পর্যাপ্ত ঘুমের সমস্যা ত্বকে ব্রনের সমস্যা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ডপলার নীতির প্রয়োগ করে রোগ নির্ণয় করা হয়।
ধরা যাক, কোন একটি উৎস থেকে T সময় পরপর একটি করে তরঙ্গ চূড়া নির্গত হচ্ছে। এখন যদি উৎসটি জনৈক পর্যবেক্ষক থেকে V বেগে দূরে সরে যেতে থাকে, তাহলে পরপর দুটি তরঙ্গ চূড়া পর্যবেক্ষকের কাছে পৌছানোর মধ্যে উৎস আরো VT দূরত্ব অতিক্রম করবে। এর ফলে তরঙ্গ চূড়াগুলি উৎস হতে নির্গত হয়ে পর্যবেক্ষকের নিকট পৌছতে আগের চেয়ে VT/c (এখানে c হলো শব্দের দ্রুতি) পরিমাণ বেশি সময় নেবে। সুতরাং পরপর দুটি তরঙ্গ চূড়া পর্যবেক্ষকের নিকট পৌছাতে অতিবাহিত সময়,
 হবে।
উৎস হতে নির্গত হওয়ার সময়কার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য,
 ;
আর পর্যবেক্ষকের নিকট পৌছানোর সময়কার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য,
 হবে।
সুতরাং, এই দুই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যকার অনুপাত,
 1  হবে।
উৎস যখন পর্যবেক্ষকের দিকে এগিয়ে আসতে থাকবে তখনকার হিসাব-নিকাশও হবে উপরোক্ত পদ্ধতির অনুরূপ, কেবল V এর জায়গায় বসবে -V ।
যদি উৎসের দিকে পর্যবেক্ষক এগিয়ে আসে, তাহলেও পর্যবেক্ষক উৎসের থেকে বেশী মাত্রায় তরঙ্গচূড়া অনুভব করবে। এটাও কম্পাঙ্ক পরিবর্তনের কারণ।
ধরা যাক উৎসের থেকে x দূরত্ব দূরে পর্যবেক্ষক একটি তরঙ্গচূড়া অনুভব করে, আর T' সময় পরে তার পরের তরঙ্গচূড়াটি অনুভব করে, তাহলে,
যদি পর্যবেক্ষক স্থিতিশীল থাকত তাহলে ও T সময় বাদে তরঙ্গচূড়াটি অনুভব করত, যেখানে
সুতরাং,
সুতরাং, এই দুই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যকার অনুপাত,
 হবে।
পর্যবেক্ষক যখন উৎস থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে তখনকার হিসাব-নিকাশও হবে উপরোক্ত পদ্ধতির অনুরূপ, কেবল V এর জায়গায় বসবে -V ।
ধরা যাক পর্যবেক্ষক উৎসের দিকে  দ্রুতি নিয়ে এগিয়ে যায়, আর উৎস পর্যবেক্ষকের দিকে  দ্রুতি নিয়ে এগিয়ে আসে, তাহলে, এই দুই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যকার অনুপাত,
 হবে।
(সর্বোপরি, এই পদ্ধতিটি শব্দ তরঙ্গ ছাড়াও বহু প্রকার তরঙ্গের জন্য সমভাবে প্রযোজ্যে, তবে সেই সব তরঙ্গের দ্রুতি আলোর দ্রুতির থেকে অনেক কম হতে হবে। )
উদাহরণস্বরূপ, কন্যাস্তবকের অন্তর্গত ছায়াপথগুলি আমাদের ছায়াপথ, আকাশ-গঙ্গা, হতে সেকেন্ডে প্রায় ১,০০০ কি. মি. গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে। আলোর দ্রুতি হলো প্রতি সেকেন্ডে ৩,০০,০০০ কি. মি. । কাজেই কন্যাস্তবক থেকে আগত কোন বর্ণালী-রেখার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য , তার প্রকৃত মান  অপেক্ষা  গুণ বৃহত্তর হবে যেখানে,

যখন ধূবক কম্পাংক f,প্রতিসাম্য ভাবে আলো বেগ c এ চলে এবং f = f0 
একই মাধ্যমে যখনTυs = 0.7 c বেগে চলে সামনে যখন উচ্চ কম্পাকে শোনা যায় এবং সমীকরণ
f = c + 0/c - 0.7c f0 = 3.33 f0 ও পিছনে নিম্ন কম্পাকে শোনা যায় এবং সমীকরণ
f = c - 0/c + 0.7c f0 = 0.59 f0 


Source:
https://bn.wikipedia.org/wiki/ডপলার_ক্রিয়া
https://newsonebd.com/ডপলারের-ক্রিয়া-কি-ডপলার/


Comments

Popular posts from this blog

Biot-Savart এর সূত্র (৪)